দুধের ব্যবহার ও উপকারিতা :-
দুধের উপকারিতা |
আপনাদের মধ্যে অনেকেই দুধ খেতে পছন্দ করেন, তারা আশা করি আমাদের এই প্রতিবেদন পড়ে খুশি হবেন। আবার অনেকে আছে যারা দুধ পছন্দ করেন না, তাদের এই প্রতিবেদনটি পড়া উচিত। আপনাদের আজ জানাবো দুধের উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত। তাহলে শুরু করা যাক।
দুধের উপকারিতা, দুধ কেন স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারি,দুধের খাদ্যগুণ,কিভাবে দুধ ব্যবহার করবেন ? দুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া,দুধ কেন স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারি ?
নিয়মিত দুধ খাওয়ার অভ্যেস থাকলে ত্বক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যের ওপরও এর প্রভাব দেখতে পাবেন। আর কেন দুধ উপকারী বলা হচ্ছে, এ ব্যাপারে নিচে উল্লেখ করা হল।
দুধের উপকারিতা
ঘুম গাঢ় করতে
আমাদের অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, রাতে এক গ্লাস গরম জল খেলে ঘুমোলে ঘুম ভালো হয়, জলের জায়গায় গরম দুধ খেয়ে দেখুন, দারুন ফল পেতে পারেন ।
অনেকেই অনিদ্রা রোগে ভোগেন। সেক্ষেত্রে কিন্তু কিছু ডাক্তার পরামর্শ দেন রাতে শুতে যাবার আগে এক গ্লাস গরম দুধ খাওয়ার। দুধে বায়োঅ্যাক্টিভ উপাদান থাকার জন্য তা স্ট্রেস কমিয়ে ঘুম গাঢ় করতে সাহায্য করে (7)।
ত্বককে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল রাখতে
দুধে থাকে ল্যাক্টোফেরিন নামক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি উপাদান, তাই দুধ অ্যাকনের সমস্যা দূর করতে উপযোগী বলে জানা যায়। নিয়মিত লো ফ্যাট দুধ খেলে নাকি ত্বক কম ফাটে, এর কারণ হল কম ফ্যাট যুক্ত দুধে থাকে ট্রাই-গ্লিসারাইড। একটি গবেষণায় জানা গেছে, নিয়মিত ত্বকে দুধ লাগালে ত্বকের থেকে অতিরিক্ত তেল ৩১% কম বেরোয় (10)।
চুলকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে
অনেকেই কন্ডিশনার হিসেবে দুধ ব্যবহার করে থাকেন। এতে চুল মসৃণ ও চকচকে হয়ে ওঠে। এছাড়া চুলের নানা প্যাক দুধ দিয়ে বানান। এটি চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে।
ব্লাড প্রেসার ঠিক রাখতে
ব্লাড প্রেসারের সমস্যা থাকলে নিয়মিত কম ফ্যাট যুক্ত দুধ খাওয়া উচিত, এতে ব্লাড প্রেসারের মাত্রা ঠিক থাকে (8)।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
দুধে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ডি থাকার জন্য আমাদের শরীরের কোষের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একটি গবেষণার মাধ্যমে দাবি করেছে যে দুধ নাকি ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে উপযোগী (9)। তাই দুধ নিয়মিত খাওয়া খুবই ভালো । কোলন ক্যান্সারের রোগীদের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে দুধ বলে জানা যায়।
হাড় ও পেশিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে
একটি সুস্থ শরীরের জন্য হাড়ের মজবুত হওয়া খুবই জরুরি। তাই প্রয়োজন ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডি -এর। আর যেসব মহিলারা মেনোপোজের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের এই সময় হাড়ের ক্ষয় শুরু হয় কারণ শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের তারতম্য হয়ে থাকে (1)।
দুধে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডি, তাই সবারই নিয়মিত দুধ খাওয়ার অভ্যেস করা উচিত।
দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
নিয়মিত দুধ খেলে হাড় শক্ত হওয়ার পাশাপাশি দাঁতও মজবুত হয় কারণ দুধে ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডি উপস্থিত (2) । দাঁতের ওপরে যে এনামেলের স্তর থাকে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ক্ষয় হতে থাকে। ফলে দাঁতে কনকনানি ব্যাথা হতে শুরু হয়। তাই নিয়মিত দুধ খাওয়ার অভ্যেস থাকলে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয় না বলে জানা যায়।
শরীরের ওজন হ্রাস করতে
দুধে প্রোটিন থাকার কারণে তা অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখতে পারে , ফলে অন্যান্য খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যা শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে (3) । এক্ষেত্রে ননিমুক্ত বা ফ্যাট মুক্ত দুধ খাওয়া প্রয়োজন। ফলে এই ধরণের দুধ খেলে শরীরে প্রোটিন প্রবেশ করে কিন্তু ক্যালোরি নয়।
স্ট্রেস দূর করতে
নানা গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য যে স্ট্রেস কমাতে নাকি দুধ খুবই উপযোগী। তাই যদি আপনি স্ট্রেসে ভুগছেন, তাহলে অবশ্যই নিয়মিত দুধ খেতে শুরু করুন।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
জানা যায় প্রত্যেকদিন ২০০ থেকে ৩০০ মিলিলিটার দুধ খেলে নাকি হার্টের সমস্যা হওয়ার প্রবণতা ৭% কমে যায়। কম ফ্যাট যুক্ত দুধ খেলে রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমান বৃদ্ধি পায় ও খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তাই রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। কম বয়স থেকে কম ফ্যাট যুক্ত দুধ খেতে শুরু করলে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস ও অন্যান্য হৃদরোগ হওয়ার প্রবণতা কমে (4)। এছাড়া ব্লাড প্রেসার সঠিক রাখতেও সাহায্য করে।
ডায়াবেটিসের সমস্যা কমাতে
ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডি তে পরিপূর্ণ এই দুধ। আর সেজন্য দুধ ডায়াবেটিস আক্রান্তদের জন্য উপকারী খাবার বলে জানা যায় (5), (6)। তবে অবশ্যই কম ফ্যাট যুক্ত দুধ খাওয়া প্রয়োজন এক্ষেত্রে।
পেটের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি কমাতে
দুধে উপস্থিত ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডি র জন্যই পেটের সমস্যা ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে পারে বলে জানা যায় (6) । কখনোই ননি যুক্ত দুধ এই সব সমস্যার সমাধান করতে পারে না, তাই লো ফ্যাট যুক্ত দুধই খাবেন।
দুধের খাদ্যগুণ
গরুর দুধের খাদ্যগুণ সম্পর্কে নিচে উল্লেখ করা হল - ৬ টি ।
১- জল ৮৮ গ্রাম।২- এনার্জি ৬১ কিলো ক্যালোরি।
৩- প্রোটিন ৩.২ গ্রাম।
৪- ফ্যাট ৩.৪ গ্রাম।
৫- ল্যাক্টোজ ৪.৭ গ্রাম।
৬- মিনারেলস ০.৭২ গ্রাম।
কিভাবে দুধ ব্যবহার করবেন ?
২.ঘুম ভালো হওয়ার জন্য রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস গরম দুধ খেতে পারেন। ব্রেকফাস্টের সময়ও দুধ খেতে পারেন।
৩.শুধু দুধ খেতে না ভালো লাগলে হরলিক্স বা ওই জাতীয় কিছু মিশিয়েও খেতে পারেন।
৪.কোনো ফল দিয়ে মিল্ক শেক বানিয়েও খেতে পারেন, তাহলে স্বাদের পরিবর্তন হবে।
দুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
৫.আমরা জানি, কোনো কিছুই বেশি খাওয়া উচিত না। এক্ষেত্রেও আপনার পরিমান মতো দুধ খাওয়া উচিত, কখনোই ভাববেন না বেশি পরিমানে দুধ খেলে এর উপকারিতাও বাড়বে।
৬.নিয়মিত দুধ খাওয়ার অভ্যেস করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন অবশ্যই। নিচে দুধের কিছু ক্ষতিকারক দিকের কথা উল্লেখ করা হল।
১. ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স
যারা দুধ খেয়ে হজম করতে পারে না, পেটে গ্যাস বা হজমের সমস্যা হয় তাদের মূলত ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স থাকে (11)। দুধে থাকে ল্যাক্টোজ, আর যাদের ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্স থাকে, তাদের ইন্টেস্টাইনে দুধ গিয়ে তা পাচিত হয় না। কোলনে প্রবেশ করার পর তা গ্লুকোজে পরিণত হয় এবং তার সঙ্গে গ্যাসেরও সৃষ্টি হয় । এর ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও দেখা দেয়। এক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয় যে দুধে অ্যালার্জি আছে।
২. হরমোনের তারতম্য
দুধে থাকে ইস্ট্রোজেন হরমোন, যদি বেশি দুধ খাওয়া হয়ে যায় তাহলে শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণও বেড়ে যায় কারণ এমনিতেই এই হরমোন তৈরী হয়। এর ফলে ব্রেস্ট, প্রস্ট্রেট ক্যান্সার সম্ভাবনা বাড়তে পারে বলে জানা যায় (12)।
দুধের গুনাগুণ ও ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে তো জানলেন, তাহলে বুঝতেই পারছেন এটি শরীরের পক্ষে কতটা স্বাস্থ্যকর। তাই আশা করি, এখন থেকে নিশ্চয়ই এটি খাওয়ার চেষ্টা করবেন নিয়মিত, তবে পরিমাণ সম্পর্কে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে ভুলবেন না কিন্তু । নিজের যত্ন করুন ও সুস্থ থাকুন।
হ্যাঁ, অবশ্যই উপকারী। এতে ঘুম ভালো হয়, তবে গরম দুধ এক্ষেত্রে উপযোগী।
কাঁচা দুধ কি খাওয়া যেতে পারে ?
না, কখনোই না।
গরম দুধ খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় ?
দুধের যেসব উপকারিতা আছে, তা গরম দুধ খেলেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাওয়া যায়।
খালি পেটে দুধ খাওয়া কি উচিত ?
খালি পেটে দুধ না খাওয়াই উচিত।
No comments:
Post a Comment