কলার উপকারিতা, ব্যবহার এবং ক্ষতিকর দিক – Banana Benefits, Uses and Side Effects in Bengali
সব ধর্মের এবং গোষ্ঠীর মানুষের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল হলো কলা। হিন্দিতে একে কেলা বলা হয়। কন্নারে বেল হান্নু বলা হয়। এটি মূলত সবুজ এবং হলুদ দুই বর্ণের হয়ে থাকে। কাঁচা কলা সবুজ বর্ণ ধারণ করে এবং পাকা কলা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। এটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। মূলত এটি নরম প্রজাতির হয়। বিশ্বের খাদ্য ফসল গুলির মধ্যে আর্থিক মূল্যের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে কলা। শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সের মানুষের মধ্যে খুব জনপ্রিয় এই ফলটি। কলা সরাসরি খাওয়ার পাশাপাশি কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি দিয়ে রান্নাও করা হয়ে থাকে। এমনকি কোথাও কোথাও রান্নায় আলুর প্রতিস্থাপন হিসেবেও এটি ব্যবহার হয়ে থাকে।
‘সর্ব ঘটে কাঁঠালি কলা’ এই প্রবাদ বাক্যটি আমাদের মধ্যে সকলেরই প্রায় জানা। আমাদের জীবনে কলার ভূমিকা কিন্তু ঠিক এতটাই, যতটা প্রবাদ বাক্যে মজা করে বলা হয়ে থাকে। স্বাস্থ্য রক্ষায় হোক কিংবা ত্বক ও চুলের যত্নে, প্রত্যেক ক্ষেত্রে কলার ভূমিকা অনস্বীকার্য। এমনকি আমাদের রোজকার জীবনের অধিক ব্যবহৃত ফল গুলির মধ্যে অন্যতম হল কলা। কলার অনেক গুনাগুন রয়েছে, যেগুলি খানিকটা জানলেও অনেকটাই হয়তো আমাদের অজানা। তাই আজ জেনে নিন আপনার হাতের কাছে থাকা সহজলভ্য এই ফলটি সম্পর্কে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। মূলত কলা মুসাসেই গোত্রীয় ফলের অন্তর্গত। এর বৈজ্ঞানিক নাম হল মুসাঅচুমিনটা কোল।
কলার উপকারিতা – Benefits of Banana in Bengali
স্বাস্থ্যের জন্য কলার উপকারিতা – Health Benefits of Banana in Bengali
ত্বকের জন্য কলার উপকারিতা – Skin Benefits of Banana in Bengali
চুলের জন্য কলার উপকারিতা – Hair Benefits of Banana in Bengali
কলার পুষ্টিগত মান – Banana (Kela) Nutritional Value in Bengali
কলার ব্যবহার – How to Use Banana in Bengali
সঠিক কলা বাছাই করে সেটা অনেকদিন পর্যন্ত সুরক্ষিত রাখার উপায়
কলার ক্ষতিকর দিক – Side Effects of Banana in Bengali
কলার উপকারিতা – Benefits of Banana in Bengali
দৈনন্দিন কলা গ্রহণ করলে শরীরে রক্ত শর্করার উন্নতি হওয়ার পাশাপাশি কোলন স্বাস্থ্য সুস্থ থাকে। কলা হল ম্যাগনেসিয়াম এর উৎকৃষ্ট উৎস, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে উচ্চস্তরের ট্রাইপটোফোন। যা ডিপ্রেশন কমিয়ে মানসিক সুস্থতা প্রদান করে থাকে। এছাড়াও এর মধ্যে থাকা ভিটামিন বি6 শরীরের সঠিক ঘুম হতে এবং অনিদ্রাভাব কমাতে সহায়তা করে। এরকম ভাবে বিভিন্ন উপায়ে কলা আমাদের উপকৃত করে থাকে।
আসুন জেনে নিন আপনার হাতের কাছে থাকা ফলটির উপকারিতা গুলি। কলা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হওয়ার এটি সব বয়সীদের মধ্যে ব্যবহারযোগ্য। এছাড়াও কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, যা শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এছাড়াও কলা হার্টকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে। একটি কলার মধ্যে রয়েছে 467 মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, 1 মিলিগ্রাম সোডিয়াম। এছাড়াও এর মধ্যে থাকা ভিটামিন b6 রক্তাল্পতা এবং করোনারি হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কলার মধ্যে থাকা ফাইবার জাতীয় উপাদানগুলি হজমের উন্নতি ঘটিয়ে শরীরের ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি শরীরে কার্বোহাইড্রেট এর কাজ করে।
স্বাস্থ্যের জন্য কলার উপকারিতা – Health Benefits of Banana in Bengali
আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় কলার ভূমিকা অনস্বীকার্য। আসুন জেনে নিন কিভাবে কলার সঠিক ব্যবহার করে আমরা সুস্থ থাকতে পারি।
হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় কলার উপকারিতা :
হাভার্ড মেডিকেল স্কুলের একটি প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে যে, পটাশিয়ামের পরিমাণ শরীরে যথাযথ না থাকলে সেক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কলা যেহেতু পটাশিয়াম সমৃদ্ধ একটি ফল তাই এটি হৃদযন্ত্রের সমস্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে কলার পরিমাণ নির্দিষ্ট রাখতে হবে। হৃদযন্ত্র মূলত তার সংকোচন-প্রসারণের ওপর শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে আর এই সংকোচন এবং প্রসারণ অনেকাংশে পটাশিয়াম এর উপর নির্ভর করে। হাই পোকাসিয়াম স্তর, হাইপোকলিমিয়া নামক দুটি উপাদানের কারণে হৃদযন্ত্র সঠিকভাবে তার হৃদস্পন্দন সম্পন্ন করতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দৈনিক একটি করে কলা খেলে হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা কম থাকে। এছাড়াও অতিরিক্ত ধূমপান কম করে দৈনিক ব্যায়াম করলে এক্ষেত্রে সুস্থ থাকা যায়। হার্টের সুরক্ষায় থাকা পটাশিয়ামের বিভিন্ন উপাদান গুলিকে কলা সমৃদ্ধ করে এবং হৃদযন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা কম থাকে। সে ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্র বন্ধ পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর হৃদয়ের জন্য দৈনিক একটি কলা খাওয়া প্রয়োজন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পটাশিয়াম রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। এর পাশাপাশি অবশ্যই আপনার শরীরের প্রয়োজন কতটা তা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে সেই মতো দৈনিক গ্রহণ করবেন। কেননা অত্যধিক পটাশিয়াম গ্রহণের ফলে আবার হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে চাইলে দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ কলা গ্রহণ করতে হবে এবং তার সাথে একটি সুস্থ জীবন পালন করতে হবে। কলার মধ্যে থাকা সোডিয়াম হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখার পাশাপাশি কিডনিকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কলার ভূমিকা :
কলার মধ্যে থাকা উপাদানগুলি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও কলা রক্তকে পরিশুদ্ধ করতে সহায়তা করে। মূলত কলার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম, সোডিয়াম এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় উপাদান গুলি রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি এটি শরীরের রক্তচাপ কেও নিয়ন্ত্রিত করে থাকে। ন্যাশনাল হার্ট, ফুসফুস এবং রক্ত ইনস্টিটিউট এর মতে শরীরে সঠিক ভাবে রক্ত সঞ্চালনের জন্য কলার ভূমিকা অনস্বীকার্য। কলার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। তবে এটি গ্রহণের আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তারপর এটি গ্রহণ করবেন। কেননা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দিনে দুটি কলা খেলে রক্তচাপ ১০ শতাংশের বেশি কমে যেতে হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার শরীরের বর্তমান পরিস্থিতি বুঝে এটি গ্রহণ করতে হবে।
হজমের সমাধানে কলার ব্যবহার :
কলা অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কলা যেহেতু ফাইবার সমৃদ্ধ একটি খাদ্য তাই এটি হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি করে থাকে। এছাড়াও পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া কলার মধ্যে থাকা পটাসিয়াম অন্ত্রের কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যার ফলে হজমের প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে। কলা নিজে যেমন তাড়াতাড়ি হজম হতে পারে, তেমনি অন্য খাবার কেও তাড়াতাড়ি হজম করতে পারে। কেননা কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার। যা শরীরের ভিতরে থাকা খাদ্য উপাদান কে সঠিকভাবে হজমে সহায়তা করে। এছাড়া একটি কলাতেই পেট ভরে যাওয়ার মত মনে হয়। যার ফলে অধিক খাওয়া থেকেও এটি দূরে রাখতে সহায়তা করে। এটি দ্রুত দ্রবণীয় হওয়ায় অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। এছাড়া রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে শরীর থেকে চর্বি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান কে শোষণ করে নিতে সহায়তা করে। কলা ফ্রুকটলিগোস্যাকচারাইড এর একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করে শরীর স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়তা করে। এছাড়াও পাকা কলা হজমজনিত সমস্যা গুলি নিরাময়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কলা মূলত প্রাকৃতিক এন্টাসিড হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় এটি পাকস্থলীর এসিড কমাতে এবং আলসার চিকিৎসা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়াও কলার মধ্যে থাকা উপাদানগুলি পেটের ভিতরে অতিরিক্ত মেদ জমা থেকে শরীরকে দূরে রাখে। এছাড়া এটি গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমাতে সহায়তা করে। কাঁচা কলা কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই কলায় প্রাকৃতিক অ্যাসিড কম থাকে, তাই এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে এবং পাকা কলা শরীরের হজমে সহায়তা করে। তবে কাঁচা কলা যদি অধিক পরিমাণে গ্রহণ করা হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। মূলত ডায়েরিয়ার চিকিৎসায় কাঁচা কলার ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়া খাদ্যকে দ্রুত হজম করতে চাইলে পাকা কলার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় কলার ব্যবহার :
কলা ভিটামিন বি6 সমৃদ্ধ উপাদান হওয়ায় এটি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা খাদ্যতালিকায় ভিটামিন b6 সঠিক মাত্রায় গ্রহণ করেন তাদের মস্তিষ্ক অন্যান্যদের তুলনায় বেশ প্রখর হয় এবং এরা ভালো পারফরম্যান্স করে থাকে। কলার মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষ গুলিকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া কলা মস্তিষ্কের কোষগুলির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। যেহেতু আমাদের মস্তিষ্ক গ্লুকোজ সংরক্ষণ করতে পারে না, সেহেতু কলা দৈনিক এটি সরবরাহ করে থাকে। কলায় যেহেতু ফাইবার রয়েছে তাই এতে শর্করা ধীরে ধীরে রক্তপ্রবাহকে প্রবাহিত করে এবং শরীরে ধীরে ধীরে কলা গ্লুকোজ সরবরাহ করে থাকে। কলার মধ্যে থাকা পটাসিয়াম মস্তিষ্কের কোষগুলোয় অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে। এছাড়াও এটি ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ উপাদান হওয়ায় মৃগী এবং পারকিনসন রোগের সমস্যায় সমাধান করে। কলার মধ্যে থাকা সেরোটোনিন এবং মেলাটোনিন স্ট্রেস রিলিফ করতে সহায়তা করে। এছাড়াও কলার মধ্যে থাকা উপাদানগুলি হতাশা এবং মস্তিষ্কের যে কোন ধরনের সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিয়মিত কলা খেলে মস্তিষ্কের শক্তি এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। এর পাশাপাশি তার ঘনত্ব বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কলার মধ্যে থাকা পটাসিয়াম বৃদ্ধ বয়সে স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে পারে। এছাড়াও মেনোপজাল পরবর্তী মহিলাদের ক্ষেত্রে কলা খাওয়া স্ট্রোকের সম্ভাবনা ১২ শতাংশ কমাতে সহায়তা করে। মূলত যে সমস্ত ব্যক্তিরা কম পটাশিয়াম গ্রহণ করেন তাদের স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। কেননা পটাশিয়াম কম গ্রহণ করলে সেটি হঠাৎ রক্তপাত এর ফলে স্ট্রোকের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিতে পারে।
হাড়ের গঠনে কলার উপকারিতা :
ন্যাশনাল অস্টিওপরোসিস ফাউন্ডেশনের মতে, কলার মধ্যে থাকা পটাসিয়াম হাঁড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কলা পটাসিয়ামের অন্যতম উৎস যা হাড়ের স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় সহায়তা করে। এছাড়াও কলার মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান প্রদান করে থাকে। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গুলি শরীরে ক্ষার তৈরি করতে সহায়তা করে। এছাড়াও দেখা গিয়েছে যখন কোন অ্যাসিড যুক্ত উপাদান শরীরে তৈরি হয় তখন হাড়গুলি দূর্বল হবার সম্ভাবনা থাকে, যার ফলে হাড় ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হতে পারে। তাই পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গুলি এই ক্ষার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে শরীরে ক্যালসিয়ামের ক্ষতি রোধ করা সম্ভব হয়। বয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে পটাশিয়াম গ্রহণ আবশ্যক। কেননা বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী পটাশিয়াম গ্রহণের ফলে অস্টিওপোরোসিস এর সমস্যা কম হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে খাদ্যতালিকায় পটাশিয়াম এর অন্যতম উৎস হিসাবে একটি কলা রাখলে সে ক্ষেত্রে এটি শরীরের হাড় কে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কলার ভূমিকা :
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো কলা। কার্বোহাইড্রেট সম্পন্ন উপাদান হওয়ায় এটি দৈনিক গ্রহণ করা আবশ্যক। কেননা কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করার মাত্রা কে দ্রুত বাড়াতে সহায়তা করে। আর কলাতে প্রচুর শর্করা রয়েছে। মূলত 93% ক্যালোরি কার্বোহাইড্রেট থেকে পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে। তবে কলাতে শর্করা থাকার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। এই ফাইবার হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ব্লাড সুগার কে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এটি খুব বেশি ক্ষতিকর নয়, কেননা সবুজ কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ। এটি শরীরে ফাইবার এর মত কাজ করে রক্তে শর্করার মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও এটি শরীরের পরিপাক ব্যবস্থাকে উন্নত করে রক্তে শর্করার স্পাইক গুলো কে নিয়ন্ত্রণ করে। কলার মধ্যে থাকা ভিটামিন বি সিক্স ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, কলা প্রতিদিন গ্রহণের ফলে টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকাকালীন অবস্থায় কলা খেলে সে ক্ষেত্রে শরীরে ফ্রুক্টোজ এর পরিমাণ কম থাকে।
ডায়েরিয়া নিয়ন্ত্রণে কলার উপকারিতা :
ডায়েরিয়ার চিকিৎসায় ইলেক্ট্রোলাইট প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে কলা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কলা মূলত পটাশিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি শরীর থেকে হারিয়ে যাওয়া পটাশিয়াম প্রতিস্থাপনে সহায়তা করে থাকে। ডায়েরিয়ার সমস্যা দেখা দিলে একটি কলা খেলে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও এক গ্লাস জলে এক চিমটি লবণ যোগ করে খেলে এটি শরীর থেকে হারিয়ে যাওয়া সোডিয়াম এবং ক্লোরাইড প্রতিস্থাপনে সহায়তা করে থাকে। ডায়েরিয়া থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য একটি নির্দিষ্ট ডায়েট তৈরি করা হয়েছে, একে ব্র্যাট ডায়েট বলা হয়। কলা আপেল এবং টোস্ট দিয়ে এটি তৈরি করা হয়। এটি মূলত শিশুদের জন্য অধিক কার্যকরী। এই ডায়েটে শরীরের দ্বারা উৎপাদিত মলের পরিমাণ হ্রাস করে পেটে কিছুটা স্বস্তি দেয় এই ডায়েটে প্রোটিন ফাইবার এবং ফ্যাট কম হওয়ায় এটি একটি সুষম খাদ্য। এছাড়াও এটি ডায়েরিয়া পরবর্তী অবস্থায় শরীরের পুষ্টির অভাব পূরণে সহায়তা করে। ডায়েরিয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে এটি খেলে ডায়েরিয়ার উপশমে সহায়তা করবে।
হ্যাংওভার কাটাতে কলার ব্যবহার :
পরিমাণের তুলনায় খানিকটা বেশি অ্যালকোহল পান করলেই তার পরবর্তী সময়ে হ্যাংওভার ভাবটা অনেকের মধ্যে থেকেই যায়। এমনকি সেটা রাত পেরিয়ে পরের দিন পর্যন্ত থেকে যায়। তবে এই হ্যাংওভার কাটাতে আপনার হাতের কাছেই রয়েছে কলা। কলা পটাশিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি হ্যাংওভার কাটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা পটাশিয়াম এমন এক ধরনের খনিজ অ্যালকোহল গ্রহণের পরে নষ্ট হয়ে যায় এবং ডিহাইড্রেশন ঘটায়। তাই কলা এবং মধু দিয়ে মিল্কশেক তৈরি করে খাওয়া গেলে খুব শীঘ্রই হ্যাংওভার থেকে মুক্তি পেয়ে যায়। কারণ কলা স্নায়ুগুলোকে শান্ত করে এবং মধু শরীরে চিনির পরিপূরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর পাশাপাশি এতে দুধ দেওয়া যেতে পারে তাহলে তা শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সহায়তা করে। ভিটামিন বি১ এবং বি৬ হলো এমন দুটি উপাদান যা হ্যাংওভারের লক্ষণগুলোকে কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও কলার মধ্যে থাকা গ্লুকোজ এবং ইলেকট্রোলাইট গুলি হ্যাংওভার এর চিকিৎসা করতে সহায়তা করে।
রক্তাল্পতা নিয়ন্ত্রণে কলার ব্যবহার :
বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো রক্তাল্পতা। মূলত গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতার সমস্যা দেখা দেয়, তখন ফলিক অ্যাসিডের আদর্শ ডোজ দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। পুষ্টিকর খাবার গুলিতে পাওয়া ভিটামিন এর পাশাপাশি এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে থাকে। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যরক্ষায় রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করা আবশ্যক। সেকারণে কলার ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। কলাতে থাকা ভিটামিন সি এর যথাযথ সহায়তা করে এবং এটি রক্তস্বল্পতার সাথে লড়াই করে। এছাড়া ভিটামিন বি টুয়েলভ রক্তাল্পতার চিকিৎসা করতে সহায়তা করে। যদিও ভিটামিন বি টুয়েলভ খুব বেশি মাত্রায় কলার মধ্যে নেই, তবে এটি ভিটামিনের সঠিক সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও কলার মধ্যে থাকা তামা ও আয়রন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে কলার উপকারিতা :
কলার মধ্যে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপকে কমাতে সহায়তা করে। তাই এটি যেকোনো ধরনের মানসিক চাপ কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কলা শর্করা সমৃদ্ধ একটি ফল হওয়ায় এটি মানসিক চাপকে শিথিল করতে পারে এবং স্নায়ুকে শান্ত রাখতে সহায়তা করে। কলার মধ্যে রয়েছে ডোপামিন নামের এক ধরনের রাসায়নিক, যা স্নায়ুতন্ত্রকে প্রশান্ত করে চাপ কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও কলার মধ্যে থাকা ভিটামিন বি6 যে কোন ধরনের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। তাই অত্যধিক মানসিক চাপ কিংবা স্ট্রেস দেখা দিলে সে ক্ষেত্রে দৈনিক একটা করে কলা খাওয়া উচিত কিংবা হঠাৎ করে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেলে তখন কলা খেলে তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
শক্তি বাড়াতে কলার উপকারিতা :
কলা হল অ্যামিনো এসিড সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক শর্করা এবং অন্যান্য খনিজ সমৃদ্ধ একটি খাদ্য উপাদান। যা শরীরের শক্তিকে বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে থাকে। উপাদানগুলি ধীরে ধীরে রক্ত সরবরাহ কে সঠিক ভাবে প্রেরণ করে থাকে। এছাড়াও এটি শরীর থেকে খারাপ উপাদান বের করে দিতে সহায়তা করে। কলার মধ্যে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা ব্যায়ামের পরে খেলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এগুলিকে যথাযথ পূরণ করতে এবং জল ধরে রাখতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দুটিমাত্র কলা 90 মিনিটের কঠোর পরিশ্রমের মতন শক্তি দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কলা যেকোনো ধরনের উচ্চশক্তিসম্পন্ন পানীয়র সমান উপকারী হতে পারে। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যাথলিটরা ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়াও এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য উপাদান গুলি শরীরের শক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে।
চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় কলার ব্যবহার :
শরীরের পাশাপাশি চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে কলা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কলার মধ্যে থাকা উপাদানগুলি চোখে ছানি পড়ার যে ছত্রাকের সৃষ্টি হয় তা কমাতে সহায়তা করে। মূলত কলার মধ্যে থাকা ভিটামিন-এ চোখ এবং কর্নিয়ায় সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। যাতে কোনো রকমে বাইরের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা চোখ আক্রান্ত হতে না পারে।
মাসিকের যন্ত্রণা কমাতে কলার উপকারিতা :
বর্তমান স্ট্রেসফুল জীবনের অন্যতম একটি সমস্যা হল মাসিকের যন্ত্রণা। বলা যায় ৯০ শতাংশ মহিলাই এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। তবে দৈনিক একটি করে কলা খেলে এই সমস্যার উপশম হতে পারে। কেননা কলার মধ্যে থাকা পটাসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ গুলো পিরিয়ডের সময় জরায়ুর পেশীগুলোকে শক্তি প্রদান করে এবং ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও তলপেটে ব্যথা হয় সেগুলো কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কলার মধ্যে থাকা ভিটামিন b6 পেটে ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া মতো সমস্যাগুলো সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। (১২)
মশার কামড়ের যন্ত্রণা কমাতে কলার ব্যবহার :
মশার কামড়ে নাজেহাল অবস্থা! একনাগাড়ে চুলকে চুলকে গায়ের চামড়া উঠে যাচ্ছে? কিন্তু আপনি জানেন কি আপনার হাতে কাছে থাকা কলা হতে পারে এর মোক্ষম ওষুধ। কলার খোসার ব্যবহারেই এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কলার খোসার মধ্যে থাকা শর্করা জাতীয় উপাদান মশার কামড়ের জায়গা থেকে জীবাণু সরিয়ে দিতে সহায়তা করে। যার ফলে মশার কামড় আক্রান্ত স্থানটি কলার খোসা দিয়ে ঘষলে সেখান থেকে মশার কামড় জনিত প্রদাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে আক্রান্ত স্থানটিতে কলার খোসা ব্যবহার করার আগে অবশ্যই একবার ডেটল দিয়ে মুছে নেবেন। তাতে ব্যাকটেরিয়া সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয়ে যাবে।
ইমিউনিটি বাঁচাতে কলার উপকারিতা :
ইতিমধ্যেই আমরা জেনে গিয়েছি কলার মধ্যে থাকা স্বাস্থ্যকর উপাদান গুলি কিভাবে আমাদের শরীর চর্চায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কলার মধ্যে রয়েছে এমন এক ধরনের উপাদান, যা রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার সময় কোষগুলিকে তাদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কে উন্নত করে তোলে। পাশাপাশি কলার মধ্যে থাকা এনজাইমগুলো আয়রন কে সঠিকভাবে হজমে সাহায্য করে। যার ফলে শরীরে আয়রনটা যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয়। কলার মধ্যে থাকা ভিটামিন সি সর্বকালের গুরুত্বপূর্ণ শ্বেত রক্তকণিকার উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে। এর পাশাপাশি ভিটামিন শরীর থেকে যেকোনো ধরনের রোগ জীবাণু ধ্বংস করতে এবং রক্তকণিকাকে যথাযথভাবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে। এছাড়াও কলার মধ্যে থাকা ফোলেট অন্যতম একটি পুষ্টিকর উপাদান, যা প্রোটিনকে শরীরে যথাযথ গ্রহণে সহায়তা করে। কলার মধ্যে থাকা লেক্টিন নামক অপর একটি উপাদান শরীরকে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে। এটি শরীরের কোষগুলোকে ভাইরাস আক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। যাতে শরীরে মারাত্মক কোনো ভাইরাস আক্রমণ করতে না পারে। এছাড়াও কলার মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়ামও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করে। যার ফলে দৈনিক গ্রহণের ফলে এ ধরনের সমস্যা গুলো দূর হয়। এর পাশাপাশি কলার মধ্যে থাকা পটাসিয়ামও শরীরকে যথাযথ শক্তি জুগিয়ে শরীরের ইমিউনিটি ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
মর্নিং সিকনেস সমস্যায় কলার ব্যবহার :
গর্ভবতী মহিলাদের অন্যতম একটি সমস্যা হল মর্নিং সিকনেস। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে সকাল বেলা বমি ভাব কিংবা বমি হতে দেখা যায়। এই সমস্যার ক্ষেত্রে কোন ওষুধ ব্যবহার না করে দৈনিক একটি করে কলা খেয়ে এটিকে নির্মূল করতে পারেন। কলার মধ্যে থাকা পটাসিয়াম মর্নিং সিকনেস সমস্যাকে কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও এর মধ্যে থাকা কার্বোহাইড্রেট শরীরকে সুস্থ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে।
মেজাজ সঠিক রাখতে কলার ব্যবহার :
কাজের চাপ হোক কিংবা জীবনের চাপ, মেজাজ যেকোনো সময় বিগড়ে যেতেই পারে। দীর্ঘদিন ধরে একনাগাড়ে এক কাজ চলতে থাকার ফলে একটা সময় মানুষের বিরক্তি ভাব এসে যায়। একে নির্মূল করা যাবে দৈনিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে। যে কারণে চিকিৎসকেরা দৈনিক খাদ্য তালিকা একটি কলা রাখার কথা বলেছেন। কলার মধ্যে থাকা শর্করা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করে। যার ফলে এটি মেজাজ সতেজ রাখতে সহায়তা করে এবং এর মধ্যে থাকা ভিটামিন বি6 যেকোনো ধরনের চাপ এবং উদ্বেগ থেকে মুক্তি দেয়। কলা ট্রিপটোফেন এর অন্যতম একটি উৎস, যা সেরোটোনিনের উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে। সুখ হরমোন নামে পরিচিত এই হরমোন নিঃসরণ এর ফলে হাসি খুশি এবং আনন্দিত থাকা যায়। ভিটামিন বি গ্রহণের ফলে হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে এবং এই সমস্ত ভিটামিন এ পরিপূর্ণ হবার এটি অন্যতম একটি সুষম খাদ্য। কলার মধ্যে থাকা পটাসিয়াম মস্তিষ্কের নিউরন গুলিতে সুগঠিত রাখতে সহায়তা করে। যার ফলে যেকোনো ধরনের সমস্যা থেকে মস্তিষ্ককে বাইরে রাখতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কলাতে থাকা সেরোটোনিন মস্তিষ্কের রক্তসঞ্চালন কে ত্বরান্বিত করে। যার ফলে মেজাজ সুস্থ রাখতে সহায়তা হয়।
ওজন হ্রাস করতে কলার উপকারিতা :
শুনে হয়তো অবাক হচ্ছেন, যে ওজন হ্রাস করবে কলা। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। কলা যথাযথভাবে খেলে ওজন হ্রাস করা সম্ভব হয়। কলার মধ্যে থাকা ফাইবার জাতীয় উপাদানগুলি ওজন হ্রাসে সহায়তা করে। এছাড়া এর মধ্যে থাকা স্টার্চ জাতীয় উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ওজন হ্রাসের জন্য অন্যতম একটি খাদ্য কলা, কারণ এটি শরীরের অতিরিক্ত চিনি কে শরীরে ফ্যাট হিসাবে জমতে দেয় না। ওজন হ্রাসের জন্য সকালে খালি পেটে একটি করে কলা খেতে পারেন। এটি অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভর্তি রাখতে সহায়তা করে। কার্বোহাইড্রেট এর অন্যতম উৎস হওয়ার এটি আপনি প্রাতরাশের জন্য রাখতেই পারেন। তবে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। তাই নির্দিষ্ট পরিমাণ কলা খেয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
দাঁত সাদা করতে কলার ব্যবহার :
অত্যধিক ধূমপান কিংবা তামাক গ্রহণের ফলে দাঁতের রং পাল্টে যাওয়া এ কোনো নতুন ব্যাপার নয়। তবে দাঁতের রং সাদা করতে ব্যবহার করুন কলা। এটি যেকোনো ধরনের কড়া দাগ কে কমাতে সহায়তা করে। কলার মধ্যে থাকা উপাদানগুলি দাঁতকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দাঁতের উপরে পড়া কালো দাগ কমাতে সহায়তা করে।
অনিদ্রা কাটাতে কলার ব্যবহার :
ঠিকমতো ঘুম হচ্ছে না, এই সমস্যায় নাজেহাল বালক থেকে বৃদ্ধ। কারো পড়ার চাপ, কারোর কাজের চাপ কিংবা কারোর পারিবারিক চিন্তা। তবে এবার আর চিন্তা নেই রোজ খাদ্যতালিকায় একটি করে কলা রাখুন এর মধ্যে থাকা পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ুকে শিথিল করতে এবং ঘুমাতে সহায়তা করে। কলার মধ্যে থাকা ট্রিপটোফ্যান ঘুমের ওষুধের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যে সমস্ত রোগীরা ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য ব্যবহৃত ওষুধের ট্রিপটোফ্যান এর ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও কলার মধ্যে থাকা মেলাটোনিন অনিদ্রার চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে।
পেটের আলসার চিকিৎসায় কলার ব্যবহার :
খাবারের সমস্যার ফলে কিংবা দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার ফলে পেটে আলসার দেখা দিতে পারে। এছাড়াও শরীরের ভেতরে অম্বলের সমস্যা বৃদ্ধি পেলে অতিরিক্ত অ্যাসিড নিঃসরণ হলে সে ক্ষেত্রে আলসারের মত সমস্যার সৃষ্টি হয়। তবে এই সমস্যা থেকে নিরাময় পেতে দৈনিক একটি করে কলা গ্রহণ করুন। কলার মধ্যে থাকা উপাদানগুলি শরীরের অভ্যন্তরীণ অ্যাসিড নিঃসরণে বাধা দেয় যার ফলে আলসারের মতো সমস্যা কম থাকে। কলার মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম শরীরকে ভেতর থেকে জীবাণুমুক্ত করে তোলে। যার ফলে শরীর ব্যাকটেরিয়া মুক্ত হয়। এছাড়া পাকা কলা হজমজনিত সমস্যা গুলি নিরাময়ে সহায়তা করে।
ত্বকের জন্য কলার উপকারিতা – Skin Benefits of Banana in Bengali
ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্যরক্ষায় কলার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা জেনেছি। এবার জেনে নিন ত্বক পরিচর্যায় কিভাবে কলার ব্যবহার করে ত্বককে সুন্দর করে তুলবেন।
ত্বককে ময়শ্চারাইজ করতে কলার ব্যবহার :
যে কোন ধরণের ত্বকের জন্য অন্যতম প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে পরিচিত কলা। কলাতে উপস্থিত ভিটামিন এ ত্বকের হারানো আর্দ্রতা পুনরুদ্ধার করে এবং নিস্তেজ ত্বককে সতেজ করে তুলতে, শুষ্কতা নিরাময় করতে সহায়তা করে। কলার সাহায্যে তাকে তৎক্ষণাৎ উজ্জ্বল করা সম্ভব হয়।
২) চোখের চারপাশ বাদ দিয়ে কুড়ি থেকে পঁচিশ মিনিট মুখে লাগিয়ে রেখে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৩) তখনই দেখতে পাবেন ত্বক নরম এবং কোমল হয়ে উঠেছে।
৪) এছাড়া এই প্যাকে প্রয়োজনে মধু যোগ করতে পারেন।
৫) কলা এবং মধুর প্যাক ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলবে।
৬) উজ্জ্বল এবং দীপ্তিময় ত্বক পেতে অন্যতম একটি প্যাক হলো পাকা কলা।
৭) তার সাথে এক টেবিল চামচ দই এবং 1 চা চামচ ভিটামিন ই তেল মিশিয়ে নিয়ে পরিষ্কার মুখে লাগিয়ে রাখুন।
৮) এবং 30 মিনিট পর ধুয়ে নিন। এটা দেখবেন এক নিমিষেই ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
অ্যান্টি এজিং উপাদান হিসেবে কলার ব্যবহার :
কলার মধ্যে থাকা উপাদানগুলি ত্বকের আর্দ্রতা ফিরিয়ে ত্বকের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে। যে কারণে কুচকে যাওয়া, বুড়িয়ে যাওয়া ত্বকে আর্দ্রতা প্রদান করে ত্বককে তরুণ রাখে।
২) এবার এটি কুড়ি মিনিটের জন্য মুখে লাগিয়ে রাখুন।
৩) তারপর ধুয়ে ফেলুন।
৪) এতে ত্বক উজ্জ্বল এবং টানটান হয়ে উঠবে।
৫) কলার মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলি এবং এভোকাডোর মধ্যে থাকা ভিটামিন ই ত্বকের ফ্রিরেডিকেল গুলির সাথে লড়াই করে ত্বকের ক্ষতি নিরাময় করে।
৬) এছাড়াও অর্ধেক কলা নিয়ে তার সাথে 1 চা চামচ গোলাপজল মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে মুখে এবং ঘাড়ে লাগিয়ে আধঘণ্টা পর ধুয়ে ফেললে একটি সতেজ ত্বক উপহার পাবেন।
ত্বকের জেল্লা বাড়াতে কলার ব্যবহার :
কলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা ত্বককে আর্দ্র এবং কোমল রাখতে সহায়তা করে। তাই কলার সাহায্যে আপনি এই সমস্ত প্যাকগুলি ব্যবহার করে আপনার হারিয়ে যাওয়া জেল্লা ফিরিয়ে আনতে পারেন।
২) এবার এটি পরিষ্কার মুখে লাগিয়ে কুড়ি থেকে 25 মিনিট অপেক্ষা করুন।
৩) এবং তারপর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অন্যতম একটি উপকারী ফেসপ্যাক।
৪) এটি ত্বক থেকে অতিরিক্ত সেবাম নিঃসরণ দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে সহায়তা করবে।
৫) শুষ্ক ত্বকের জন্য অন্যতম একটি প্যাক হলো একটি পাকা কলার মধ্যে একটি লেবুর রস মিশিয়ে নিন।
৬) এবার এই মিশ্রণটি পরিষ্কার মুখে রেখে কুড়ি মিনিট অপেক্ষা করুন।
৭) এরপর ধুয়ে ফেলুন।
৮) এটি ত্বক থেকে দাগ ছোপ কমাবে এবং ত্বককে জেল্লাদার করে তুলবে।
৯) কলার সাথে দুধ ব্যবহার করেও ত্বককে জেল্লাদার করে তুলতে পারেন।
১০) কলাটি ভালো করে ফেটিয়ে নিয়ে তারমধ্যে দুধ মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন এবং তার মধ্যে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল যোগ করুন।
১১) এবার এই মিশ্রণটি মুখে ঘাড়ে কুড়ি মিনিট রেখে দিন।
১২) তারপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে উজ্জ্বল করতে সহায়তা করবে।
ত্বকের মৃতকোষ অপসারণে কলার ভূমিকা :
ত্বককে সুন্দর এবং সুস্থ রাখতে সপ্তাহে অন্তত দু’বার এক্সফোলিয়েশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কলা দিয়ে তৈরি স্ক্রাব দিয়ে ত্বকের এক্সফোলিয়েশন করতে পারেন। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি উপাদান হওয়ায় ত্বকের ওপর দিয়ে মৃত কোষগুলি অপসারণের পাশাপাশি ত্বককে বাড়তি উজ্জ্বলতা দিয়ে থাকে। বাড়িতেই তৈরি করে নিন কলার স্ক্রাব।
২) এর মধ্যে এক টেবিল চামচ চিনি যোগ করুন।
৩) এবার এটি ভালো করে মিশিয়ে ত্বকের ওপর বৃত্তাকারভাবে ঘষে নিন।
৪) এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করবে এবং চিনির দানা গুলো শরীরের মৃত কোষ গুলিকে সরাতে সহায়তা করবে।
৫) একটি পাকা কলা তার মধ্যে 2 টেবিল চামচ ওটস, 1 টেবিল চামচ মধু এবং দুধ যোগ করে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন।
৬) এবার এটি মুখে লাগিয়ে 15 মিনিট রেখে দিন।
৭) তারপর ভেজা হাতে মুখে ঘষে ঘষে তুলুন।
৮) এটি ত্বককে মসৃণ করে তুলবে।
৯) এছাড়া কলা দিয়ে বডি স্ক্রাব তৈরি করে নিতে পারেন সে ক্ষেত্রে, দুটি কলা, চার-পাঁচটি স্ট্রবেরি দিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন এবং এর মধ্যে 3 টেবিল চামচ চিনি মিশিয়ে নিন।
১০) স্নান করার সময় সারা শরীরে ব্যবহার করুন।
ব্রণ কমাতে কলার উপকারিতা :
ব্রণ আমাদের সকলেরই অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। তবে এটি নিরাময়ে কলার খোসা ব্যবহার করতে পারেন।
২) এবার কলার খোসার ভেতরের অংশ আলতো করে ঘষুন এবং তারপর 5 মিনিটের জন্য তা রেখে দিন।
৩) এবার এটি শুকিয়ে গেলে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৪) সপ্তাহে 3 দিন এটি ব্যবহার করুন। এক সপ্তাহেই তফাৎটা বুঝতে পারবেন।
চুলকানি দূর করতে কলার ব্যবহার :
অ্যালার্জির কারণে কিংবা পোকামাকড় কামড়ানোর ফলে চুলকানির সমস্যা গুলো দূর করার জন্য অন্যতম একটি প্রয়োজনীয় উপাদান হলো কলা। এটি এলার্জি যুক্ত ত্বকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এইরকম জায়গায় কলার খোসা ভেতরের দিকটা ভালো করে ঘষে নিন। এতে স্বস্তি পাবেন।
২) এবং প্রতিদিন 10 থেকে 15 মিনিটের জন্য একবার ব্যবহার করুন।
৩) আপনার ওষুধের ব্যবহারের পাশাপাশি এটি করতে পারেন। তবে অবশ্যই আপনার চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে এটি ব্যবহার করবেন।
চোখের ফোলা ভাব কমাতে কলার ব্যবহার :
একনাগাড়ে কম্পিউটারে কাজ করলে কিংবা সঠিকভাবে ঘুম না হলে কিংবা চোখ খুব বেশি ঘষলে চোখের তলায় ফোলা ভাব দেখা দেয়। কলার মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলি চোখের নিচের রক্তনালী গুলিকে স্বস্তি প্রদান করে চোখের ফোলাভাব কমাতে সহায়তা করে।
২) এরপর পনেরো থেকে কুড়ি মিনিট অপেক্ষা করে তা ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
৩) কলার মধ্যে থাকা পটাসিয়াম চোখের নিচের ফোলা ভাব কমাতে এবং সেই জায়গাটাকে ঠান্ডা ভাব দিতে সহায়তা করে।
পায়ের যত্নে কলার ব্যবহার :
দীর্ঘ সময় ধরে খালিপায়ে হাঁটাচলা করলে কিংবা হঠাৎ মরসুমের পরিবর্তন হলে সেক্ষেত্রে ফাটা গোড়ালির সমস্যা দেখা যেতে পারে। ফাটা গোড়ালির চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কলা।
২) এবং 10 মিনিট অপেক্ষা করুন।
৩) 10 মিনিট পর ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৪) শুষ্ক ত্বক প্রতিরোধ করে এবং ফাটা গোড়ালির সমস্যা দূর করে পায়ের ত্বকে আর্দ্রতা প্রদান করে তা কোমল করে তোলে।
সৌন্দর্যের ঘুম নিন কলার ব্যবহার করে :
ইতিমধ্যেই আমরা জেনে গিয়েছি অনিদ্রা জনিত সমস্যা দূর করতে কলার ব্যবহার অনস্বীকার্য। তাই কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে নিজের ত্বককে চনমনে করে তুলতে একটা বিউটি স্লিপ আবশ্যিক। সে ক্ষেত্রে যদি অতিরিক্ত চাপ থাকে কিংবা স্ট্রেস থাকে সকালে উঠে একটা কলা খেয়ে নিন। তাহলে সারাটাদিন চাপমুক্ত থাকবেন। এর পাশাপাশি কাজের ফাঁকে 5 থেকে 10 মিনিটের একটা ছোট্ট বিশ্রাম নিয়ে নিন। এতে আপনি আরো চনমনে হয়ে উঠবেন। এতে আপনার ত্বক উজ্জল হয়ে উঠবে।
চুলের জন্য কলার উপকারিতা – Hair Benefits of Banana in Bengali
ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য এবং ত্বকের যত্নে কলার ভূমিকা সম্পর্কে আমরা জেনে নিয়েছি। এবার জেনে নিন চুলের যত্নে কিভাবে কলা ব্যবহার করতে পারবেন।
চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় কলার উপকারিতা :
কলার মধ্যে থাকা ফলিক অ্যাসিড চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তুলতে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি চুলে আর্দ্রতা প্রদান করে। যার ফলে চুল শুষ্ক হয়ে যায় না। কলার মধ্যে থাকা পটাসিয়াম চুলকে প্রাকৃতিক ভাবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখে। কলা দিয়ে চুলের পরিচর্যার জন্য অনেকগুলো প্যাক রয়েছে জেনে নিন সেগুলো।
নরম চুলের জন্য :
২) এবার এই মিশ্রণটিতে নারকেলের দুধ যোগ করুন।
৩) এবার এই মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে 15 থেকে কুড়ি মিনিট অপেক্ষা করুন।
৪) তারপর হারবাল কোন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
চকচকে চুলের জন্য :
২) এই মিশ্রণটি আপনার চুলে লাগিয়ে 15 মিনিট অপেক্ষা করুন।
৩) তারপর আপনি যে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন তা দিয়ে চুল ধুয়ে চুলে কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন।
স্ট্রং চুলের জন্য :
১) পাকা কলা এবং দই মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন।
২) এবার এই মসৃণ পেস্টটি মাথায় লাগিয়ে 15 থেকে কুড়ি মিনিট অপেক্ষা করুন।
৩) তারপর ধুয়ে ফেলুন।
৪) এটি সপ্তাহে দুদিন করুন। চুল মজবুত হবে।
৫) যারা শুষ্ক চুলের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এটি। একটি পাকা কলার সাথে 3 চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন।
৬) এবার এই মিশ্রণটি চুলটা ভেজা অবস্থায় লাগিয়ে নিন।
৭) এবার 15 থেকে কুড়ি মিনিট অপেক্ষা করুন।
৮) তারপর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন।
ক্ষতিগ্রস্ত চুলের জন্য :
২) এবার এই মিশ্রণটি মাথায় লাগিয়ে 15 থেকে কুড়ি মিনিট অপেক্ষা করুন।
৩) কলার মধ্যে থাকা ভিটামিন এ এবং সি চুলকে আর্দ্রতা প্রদান করে নরম এবং উজ্জ্বল রাখতে সহায়তা করবে।
তবে এগুলো ব্যবহার করার পর অবশ্যই মনে রাখবেন, চুল ধোয়ার পরে যাতে চুলে কোনরকম কলার টুকরো বা অংশ আটকে না থাকে
এতে চুল চ্যাটচ্যাটে ধরনের হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও এগুলি চুলে খুব বেশি শুকোতে দেবেন না। কিছুক্ষণ লাগিয়ে ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করবেন। না হলে এগুলি চুলে আটকে থাকতে পারে এবং চুল কে রুক্ষ করে তুলতে পারে।
কলার ব্যবহার – How to Use Banana in Bengali
ইতিমধ্যেই কলার গুনাগুন সম্পর্কে আমরা অনেকটাই জেনে নিয়েছি। এবার কলা কিভাবে, কত পরিমাণ, কখন খাওয়া উচিত সেগুলো আমরা জেনে নি। মূলত কলা সরাসরি খাওয়ার পাশাপাশি রান্না করে অনেকাংশে খাওয়া যেতে পারে। জেনে নিন কিভাবে সেটি ব্যবহার করবেন।
১) প্রাতরাশ এ ব্যবহার করুন দুটি বড় বড় কলা, এক কাপ বাদাম দুধ, চিনাবাদাম, কোকো পাউডার, ভ্যানিলা এসেন্স দিয়ে ব্লেন্ডারে ভালো করে একটি স্মুদি বানিয়ে নিন।
২) কলা এবং অ্যাভোকাডো দিয়ে স্মুদি। একটা কলা, একটা এভোকাডো, এক কাপ দই, বাদাম দুধ, ভ্যানিলা এসেন্স, মধু এবং বরফের টুকরো দিয়ে ব্লেন্ডারে ভালো করে মিশিয়ে স্মুদি বানিয়ে প্রাতরাশে খান।
সঠিক কলা বাছাই করে সেটা অনেকদিন পর্যন্ত সুরক্ষিত রাখার উপায়
কলা কেনার সময় মাথায় রাখবেন সেগুলি যাতে খুব বেশি শক্ত কিংবা খুব বেশি নরম না হয়। যে কলার গায়ে বাদামী রংয়ের হালকা দাগ রয়েছে সেগুলি ব্যবহার করুন। কেননা সে গুলি খাওয়ার জন্য উপযুক্ত। অথবা যদি রান্না করতে চান সে ক্ষেত্রে সবুজ রংয়ের কাঁচা কলা ব্যবহার করে নিতে পারেন। সেটাও অনেকদিন ভালো থাকবে এবং ভাল করে রান্না করে খেতে পারবেন। কলা যদি অনেকদিন ধরে সংরক্ষণ করে রাখতে চান সে ক্ষেত্রে ঘরের তাপমাত্রায় রাখুন। সরাসরি সূর্যের তাপের কাছাকাছি কিংবা রেফ্রিজারেটরে কখনোই রাখবেন না। আর কলা অন্যান্য ফলের থেকে আলাদা রাখবেন। সম্ভব হলে ঘরের মধ্যে দড়ি টাঙ্গিয়ে সেখানে কলা ঝুলিয়ে রাখুন, এতে তা অনেক দিন স্থায়ী হবে।
কলার ক্ষতিকর দিক – Side Effects of Banana in Bengali
ইতিমধ্যেই আমরা কলার গুণাগুণ সম্পর্কে জেনে নিয়েছি। তবে এবার জেনে নিন কলার ক্ষতিকর দিকগুলো। কোন জিনিসই অতিরিক্ত ব্যবহার ঠিক নয়। এক্ষেত্রে কলাও তার ব্যতিক্রম নয়। জেনে নিন কলার ক্ষতিকর দিকগুলি :
২) গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করবেন।
৩) কলা গাছের পাতা, কান্ড সবকিছুই খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। কিন্তু কোনোরকম এলার্জিরসমিস্যা থাকলে দেখে নেবেন কলা গাছের কোন বিশেষ অংশ আপনার খাওয়া উচিত নয়।
৪) কলার মধ্যে উচ্চমাত্রায় অ্যামিনো এসিড থাকায় এটি অধিকগ্রহণের ফলে রক্তনালীতে প্রভাব পড়তে পারে। যার ফলে মাথাব্যথার সৃষ্টি হয় এবং এর মধ্যে ট্রিপটোফ্যান থাকায় এটি বেশি পরিমাণে খাবার ফলে বেশি ঘুম পাওয়ার সমস্যা হতে পারে।
৫) কলা শর্করা সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় এটি খাওয়ার পর ঠিকভাবে মুখ না ধুলে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে।
৬) পটাশিয়ামের অধিগ্রহণের ফলে হাইপারক্যালেমিয়া রোগ দেখা দিতে পারে। যার ফলে পেশির দুর্বলতা কিংবা অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের সমস্যা হতে পারে। তাই দৈনিক অল্প পরিমাণে কলা খেতে হবে।
৭) অতিরিক্ত কলা খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যার ফলে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে। তাই নির্দিষ্ট পরিমাণ খান।
৮) যদি কারো কিডনির সমস্যা থাকে সে ক্ষেত্রে তাদের কলা খাওয়ার পরিমান করিয়ে দেওয়া উচিত। কেননা অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে তা কিডনির ব্যথা সৃষ্টি করতে পারেন।
তাহলে ইতিমধ্যেই জেনে নিয়েছেন কলার গুনাগুন গুলি। তাহলে আর অপেক্ষা কিসের? এগুলি মেনে চলুন এবং নিজে সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন এবং ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য রক্ষায় ত্বক পরিচর্যায় কলার ব্যবহার গুলো জেনে নিয়েছেন সেগুলি মেনে চলুন।
No comments:
Post a Comment