আপেলের উপকারিতা, ব্যবহার এবং ক্ষতিকর দিক – Apple Benefits, Uses and Side Effects in Bengali
কথায় আছে, “প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে সারা জীবনের জন্যে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না।” আসলে এই প্রবাদের কারণ হল এই যে আপেল এমন একটি ফল যার মধ্যে রয়েছে ভরপুর পুষ্টিকর উপাদান যা শরীরের জন্যে অত্যন্ত উপকারী। ভরপুর এন্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবারে সম্পন্ন এই আপেল খুব সহজেই বাজারে পাওয়া যায় ও পুষ্টির তুলনায় এর দাম এমন কিছুই বেশি নয় (১)। আপেলের উপকারিতা নানারকম ভাবে হার্ট, মস্তিস্ক, পেট, হাড় ও চোখের ক্ষেত্রে বার বার প্রমাণিত হয়েছে।
আপেলের বৈজ্ঞানিক নাম হল ম্যালাস ডোমেস্টিকা এবং এই ফল সারা বছর ধরে পৃথিবীর সর্বত্র দেশগুলিতে আমদানি ও রপ্তানি করা হয়ে থাকে (২)। ডাক্তারদের মতে প্রতিদিন যেসব সবজি বা ফল অবশ্যই খাওয়া উচিত তার মধ্যে আপেল হল অন্যতম।
Table Of Contents
আপেলের উপকারিতা – Benefits of Apple in Bengali
স্বাস্থ্যের জন্য আপেলের উপকারিতা – Health Benefits of Apple in Bengali
ত্বকের জন্য আপেলের উপকারিতা – Skin Benefits of Apple in Bengali
চুলের জন্য আপেলের উপকারিতা – Hair Benefits of Apple in Bengali
আপেলের পুষ্টিগত মান – Apple Nutritional Value in Bengali
আপেলের ব্যবহার – How to Use Apple in Bengali
আপেলের ক্ষতিকর দিক – Side Effects of Apple in Bengali
আপেলের উপকারিতা – Benefits of Apple in Bengali
আপেলের উপকারিতা সম্পর্কে বলতে গেলে যত বলা হবে ততই কম মনে হবে। আজকের পোস্টে আমরা বিস্তারিতভাবে আপেলের উপকারিতা সম্পর্কে বর্ণনা করবো। প্রত্যমেই দেখে নেব স্বাস্থ্যের ওপরে আপেলের উপকারিতা কতখানি।
স্বাস্থ্যের জন্য আপেলের উপকারিতা – Health Benefits of Apple in Bengali
স্বাস্থ্যের জন্যে আপেলের উপকারিতা প্রখর। বয়সজনীত সমস্যা কমানো থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য, হার্টের স্বাস্থ্য বা অন্য যে কোনো স্বাস্থ্যের জন্যে আপেলের মত উপকারী কোনো ফল নেই। আসুন বিস্তারিতভাবে দেখে নেওয়া যাক:
ওজন কমানো: Weight Loss
এক বাটি খোসা সমেত আপেলের টুকরোয় রয়েছে ২.৬ গ্রাম ফাইবার। ফাইবার হজমের প্রক্রিয়াকে ধীর গতিতে পরিণত করে যার ফলে আপনার বেশ অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভর্তি থাকে। ফলে আপনার দ্রুত খিদে না পাওয়ায় আপনি সহজেই অতিরিক্ত খাওয়ার থেকে দূরে থাকবেন ও ওজন সহজেই কমে যাবে (৩), (৪)। একটি কাঁচা আপেলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হল ৩৬ ও আপেলের জ্যুসে রয়েছে ৪১। এগুলি রক্তে সুগারের পরিমাণ কম করতে সাহায্য করে এবং বার বার ক্ষুধাভাব রোধ করে (৫), (৬)। আপেল ফ্যাট কমাতেও বেশ কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে (৭)।
ক্যান্সার: Cancer
প্রতিদিন আপেল খেলে ক্যান্সারের মত রোগকে প্রায় ৮০% রোধ করা যায়, বিশেষ করে ফুসফুসের ক্যান্সার, কোলোরেকটল ক্যান্সার ও পেটের ক্যান্সার। এমনকি, কিছু কিছু পরীক্ষায় দেখা গেছে যে ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধ করতেও আপেল খুব কার্যকরী (৮), (৯), (১০)। এছাড়া আপেলে রয়েছে প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট (১১)। এই এন্টি অক্সিডেন্ট সেই সব রেডিক্যাল দূর করে যা শরীরের কোষগুলিকে নষ্ট করে দেয় এবং নতুন করে ডি এন এ তৈরী করতে সাহায্য করে। এতে টিউমারের সংখ্যাও সহজেই রোধ করা যায় (১২)।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: Diabet Immunity
আপেলে রয়েছে প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও মিনারেল যা সহজেই নানা রকমের রোগ হওয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এর ফলে প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে নানারকমের রোগের হাত থেকে নিমেষে মুক্তি পাওয়া যায়। বিশেষ করে সর্দি কাশি, পেট খারাপ, হার্টের সমস্যা বা ইত্যাদি রোধ করতে আপেল খুব উপকারী।
দাঁতের রঙ উজ্জ্বল করে: Whiter Teeth
আপেলের সুস্বাদু মিষ্টি রস দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্যে দারুণ উপকারী। এর সাহায্যে দাঁত নষ্ট হওয়া সহজেই রোধ করা যায় আপেলের উচ্চ পরিমাণে ফাইবার মুখে এসিডের পরিমাণকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যার ফলে মুখ শুকোয় না, মুখের অর্দ্রভাব বজায় থাকে। এমনকি, আপনি যখন চিবিয়ে চিবিয়ে আপেল আপেল খান তখন ক্যাভিটি হওয়ার সম্ভাবনাও অনেকটা রোধ করা যায় (১৩)।
কোলেস্টরল দূর করে: Anti-Cholesterol
নানারকমের বৈজ্ঞনিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে আপেলে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড হার্টের বহু ধরণের রোগ রোধ করতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে মহিলাদের জন্যে তা ৩৫% বেশি কার্যকরী। এমনকি স্ট্রোকের মত সমস্যাও আপেলের সাহায্যে রোধ করা যায় (১৪)। একটি বিদেশী পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে আপেলের সাথে ওয়াইন মিশিয়ে পান করলে হার্ট এটাক এড়িয়ে চলা যায়। আপেলের খোসা ও ফল উভয়তেই কোলেস্টরল রোধ করার বিশেষ উপাদান রয়েছে (১৫)।
এস্থেমা রোধ করে: Averting Asthma
এস্থেমায় ভুক্তভুগি মানুষদের জন্যে আপেল, বিশেষ করে লাল রঙের আপেল ও তার খোসা ভীষণ উপকারী। এর প্রধান কারণ হল এন্টি অক্সিডেন্ট যা প্রাকৃতিক এন্টি হিস্টেরিনের কাজ করে। এছাড়া আপেলে রয়েছে এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা এস্থেমার এলার্জি কমাতেও সাহায্য করে।
আলজাইমার রোধ করে: Preventing Alzheimer’s
আপেলে থাকা পলিফেনল মস্তিষ্কের স্নায়ু বিনাশকারী রোগগুলি যেমন আলজাইমার ও পার্কিনসন বা যেকোনো বার্ধক্যের ফলে যে মস্তিকের রোগগুলি হয়ে থাকে সেগুলিকে রোধ করতে পারে (১৬)। এছাড়া এতে রয়েছে ফোলেট যা আরো বেশি করে মস্তিষ্কের স্নায়ু বিনাশকে রোধ করে। এমলয়েড বিটা প্রোটিন যা মস্তিষ্কে জমার ফলে আলজাইমার বাড়তে শুরু করে তা সহজেই রোধ করে আপেল (১৭), (১৮)।
পেটের সমস্যা রোধ করে: Neutralize Irritable Bowel Syndrome
আপেলে থাকা পলিফেনল, কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার কোলনের নালী পরিষ্কার করে ও পাচনতত্র সঠিক করে তোলে (১৯)। এর ফলে শরীরে জলের পরিমাণ সঠিক থাকে ও পেট পরিষ্কার হয় (২০)। আপেলে থাকা পেকটিন ও হেমিসেলুলোজ পেটে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড পরিণত হয় যার ফলে অন্ত্রের মাইক্রোবগুলি সহজেই বাড়তে পারে।
লিভার পরিষ্কার রাখে: Detoxify Your Liver
আগেই বলা হয়েছে যে আপেলে থাকে প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট যার ফলে লিভারের বিষক্রিয়াকরণ বা ফ্যাটি লিভার হওয়া খুব সহজেই রোধ করা যায়। লিভার ও অগ্নাশয়ের সমস্যা থেকে নানারকমের রোগ যেমন গল ব্লাডারে পাথর, জন্ডিস, ইত্যাদি হতে পারে। আপেলের সাহায্যে এগুলি খুব সহজেই এড়িয়ে চলা যায়।
হজম শক্তি বাড়ায়: Aid Digestion
আপেলে থাকা উচ্চ পরিমাণ ফাইবার হজমের জন্যে খুব ভাল। এই ফাইবারের সাহায্যে হজম ক্রিয়া বাড়ানোর জ্যুস উৎপন্ন হয় যার ফলে খুব সহজে ও ধীর গতিতে খাবার হজম হয়ে সম্পূর্ণ পুষ্টি শরীরের কাজে লাগে। এর ফলে ব্লাড সুগার বা ওজন বৃদ্ধি রোধ করা যায়।
রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়: Aid Blood Circulation
হার্ট এবং রক্তনালীকে অপ্রয়োজনীয় রেডিক্যাল থেকে বাঁচিয়ে নানারকমের রোগের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখে আপেল। এর ফলে রক্ত সঞ্চালনও খুব সঠিক ভাবে হয়। যদিও এই তথ্যটি নিয়ে এখনও অনেক গবেষণা চলছে।
হাড়ের জন্যে ভাল: Promote Bone Health
আপেল হল মিনারেলের ভাণ্ডার এবং এতে রয়েছে বোরন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও জিঙ্ক যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্যে ভীষণ উপকারী (২১)। মহিলাদের রজবন্ধ হওয়ার আগের দিকে এবং বয়স্ক লোকেদের অবশ্যই প্রতিদিন একটি করে আপেল খাওয়া প্রয়োজন। এর সাহায্যে অস্টিওপোরেসিস, আর্থরাইটিস বা অন্যান্য হাড়ের রোগ রোধ করা যায়।
রাতের দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়: Improve Night Vision
আপেলে থাকা ভিটামিন এ ও সি চোখ এবং চোখের দৃষ্টি শক্তি সজীব রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে বার্ধক্যের ফলে যে চোখের কোষগুলি নষ্ট হতে শুরু করে বা সংক্রমণ সৃষ্টি করে, সেগুলি আপেলের সাহায্যে অনেকটা রোধ করা যায়। আপেলে থাকা ক্যারোটিনয়েড যেমন লিউটিন ও জান্থামিন পরিষ্কার রেটিনার রঙের জন্যে খুব প্রয়োজনীয়। এর ফলে রাতের দৃষ্টি শক্তি খুব সহজেই পরিষ্কার রাখা যায় (২২)।
চোখের ফোলাভাব রোধ করে: Treatment of Puffy Eyes
লাল রঙের আপেল ও তার খোসায় থাকে লিউটিন, ক্যারোটিন, ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি। এর ফলে চোখে ছানি পড়া, অতিরিক্ত মাংস পেশী ফুলে যাওয়া, চোখের তোলার ফোলাভাব, ইত্যাদি রোধ করা যায়। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে একটি করে আপেল খাওয়ার অভ্যেস করুন (২৩)।
ভিটামিন সি ভরপুর: Source Of Vitamin C
আপেল হল ভিটামিন সি-এর ভাণ্ডার। এই ভিটামিন সি যে শরীরের জন্যে কতখানি প্রয়োজন তা হয়ত যত বলা হবে ততটাই কম। হার্ট, লিভার, ফুসফুস, পেট, দাঁত, কিডনি বা মহিলাদের যেকোনো সমস্যায় লড়াই করতে সাহায্য করে এই ভিটামিন সি। এই কারণেই বলা হয় রোজ একটি করে আপেল খেলে হাজার রকমের রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
ত্বকের জন্য আপেলের উপকারিতা – Skin Benefits of Apple in Bengali
স্বাস্থ্যের জন্যে আপেলের উপকারিতা তো দেখলেন। এবার দেখে নেওয়া যাক ত্বকের জন্যে আপেল কিভাবে সাহায্য করে। বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল।
ত্বকের রং উজ্জ্বল ও পরিষ্কার করে: Brighten And Lighten Complexion
আপেলে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ এন্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি যা ত্বকের জন্যে ভীষণভাবে উপকারী। এন্টি অক্সিডেন্ট লিভার ও পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে ও ভিটামিন সি নতুন করে কোষ জন্মাতে সাহায্য করে। এই দুটি সজীব প্রক্রিয়ার ফলে ত্বকে কোনোরকম সমস্যা দেখা দেয় না ও দিনে দিনে ত্বকের রং উজ্জ্বল ও পরিষ্কার দেখাতে শুরু করে। এমনকি, ব্রণ বা কালো দাগ ছোপের সমস্যা থাকলেও তা নিমেষের মধ্যে সেরে ওঠে।
বার্ধক্যের ছাপ রোধ করে: Anti-Aging Benefits
আপেলে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড যেমন ফ্লোরিজিন, সিলিমারিন ও জেনিসটিন। এই সবকটি হল ত্বকের জন্যে ভীষণ উপকারী। এর সাহায্যে ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ ফেলার জন্যে যেই কোষগুলি দায়ী, সেগুলি ধীরে ধীরে নষ্ট হতে শুরু করে ও ত্বক দীর্ঘ বছর পর্যন্ত উজ্জ্বল ও টানটান দেখায় (২৪)। আপেল খাওয়া ছাড়া আপনি দুধ, মধু ও আপেলের পেস্ট একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে আধ ঘন্টা রেখে দিতে পারেন। পরে সেটি জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলবেন। এই প্রক্রিয়াটি সপ্তাহে তিনদিন করে অনুসরণ করলে খুব দ্রুত ফলাফল পাবেন।
অতি বেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে: UV Protection
আপেলে থাকা এপিজেনিন, জেনিসটিন ও অন্যান্য পলিফেনল খুব সহজেই ত্বককে সূর্যর প্রখর তাপ ও ক্ষতিকারক অতি বেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। এর ফলে ত্বকে প্রচুর সেবাম উৎপন্ন হয় যা সানবার্ন হওয়াকে খুব সহজেই রোধ করে। প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে আপনি এই উপকারিতা ভোগ করতে পারবেন (২৫)।
ব্রণ ও কালো দাগ ছোপ রোধ করে: Acne, Blemishes, And Dark Spots
ব্রণ বা কালো দাগ ছোপ দূর করতে আপেলের জুড়ি মেলা ভার। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে ব্রণ বা ত্বকের কালো দাগ দূর করতে প্রয়োজন ভিটামিন সি যা আপেলের মধ্যে ভরপুর রয়েছে। এমনকি, সানবার্ন কমাতেও খুব কার্যকরী ভূমিকা নেয় আপেল। আপেল ও আমলকির পেস্টের মধ্যে কয়েক ফোটা লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে সেটি মুখে লাগিয়ে আধ ঘন্টা রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি প্রতিদিন করলে খুব দ্রুত মুখের কালো দাগ ছোপ দূর হয়ে যায়।
ত্বকের ক্যান্সার রোধ করে: Prevent Skin Cancer
এক কাপ কাঁচা আপেলে রয়েছে ৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। এই ভিটামিন ত্বকে এন্টি অক্সিডেন্ট ভরিয়ে তোলে ও ত্বককে নতুন করে কোষ জন্মাতে সাহায্য করে। এতে ত্বকে ময়শ্চার ভরপুর থাকে ও ত্বকের ক্যান্সার রোধ করা যায়।
চুলের জন্য আপেলের উপকারিতা – Hair Benefits of Apple in Bengali
স্বাস্থ্য ও ত্বক ছাড়া চুলের জন্যেও আপেলের উপকারিতা প্রবল ভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আসুন দেখে নেওয়া যাক কিভাবে:
লম্বা চুল: Hair growth
আপেলে রয়েছে প্রোক্যান্ডিন বি ২ নামক একটি পলিফেনল যা চুল লম্বা করতে দারুন সাহায্য করে। এর ফলে চুলের গোড়া মজবুত হয় ও চুলের জন্যে প্রয়োজনীয় প্রোটিন অর্থাৎ কেরাটিন উৎপন্ন হয় (২৬), (২৭)।
চুল পড়ার সমস্যা দূর করে: Prevent Hair Loss
আপেল থেকে তৈরী হয় আপেল সিডার ভিনিগার যা চুলের নানা সমস্যার জন্যে ব্যবহার করা হয়। তার মধ্যে অন্যতম হল চুল পড়ার সমস্যা ও খুশকি। অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা থাকলে সপ্তাহে তিনদিন করে চুলে এই প্যাকটি ব্যবহার করুন।
কিভাবে বানাবেন?
এক বাটি দই-এর মধ্যে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস, ডিমের সাদা অংশ ও আপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে চুলে লাগান। এর ফলে চুল পড়ার সমস্যা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে।
খুশকি দূর করে: Treatment Of Dandruff
চুলের খুশকি দূর করতেও সমানভাবে কার্যকরী আপেল সিডার ভিনিগার।
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
একটি পাত্রে আপেল সিডার ভিনিগার নিয়ে কয়েক ফোটা আদার রস ফেলে ভালো করে ঘষে ঘষে চুলের গোড়ায় লাগান। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে চুল ধুয়ে ফেলুন। খুব শীঘ্রই খুশকি দূর হয়ে যাবে।
আপেলের পুষ্টিগত মান – Apple Nutritional Value in Bengali
APPLE, RAW
Serving size 1 medium (3″ dia) or 182 g
পুষ্টি & পরিমাণ
পুষ্টিগত মান
শক্তি (কিলো ক্যালোরি) ৯৫
প্রোটিন (গ্রাম) ০.৪৭
ফ্যাট (গ্রাম) ০.৩১
কার্বোহাইড্রেট (গ্রাম) ২৫.১৩
সুগার (গ্রাম) ১৮,৯১
ফাইবার (গ্রাম) ৪.৪
কোলেস্টরল (মিলিগ্রাম) ০
মিনারেল
ক্যালসিয়াম (মিলিগ্রাম) ১১
কোপার (মিলিগ্রাম) ০.০৪৯
আয়রন (মিলিগ্রাম) ০.২২
ম্যাগনেসিয়াম (মিলিগ্রাম) ৯
ফসফরাস (মিলিগ্রাম) ২০
পটাসিয়াম (মিলিগ্রাম) ১৯৫
সোডিয়াম (মিলিগ্রাম) ২
জিঙ্ক (মিলিগ্রাম) ০.০৭
ভিটামিন
ভিটামিন এ& (মিলিগ্রাম) ৫
ভিটামিন সি (মিলিগ্রাম) ৮.৪
ভিটামিন bi& (মিলিগ্রাম) ০.০৭৫
কোলিন (মিলিগ্রাম) ৬.২
ভিটামিন ই (মিলিগ্রাম) ০.৩৩
ফোলেট (মিলিগ্রাম) ৫
ফোলেট (খাদ্য) ৫
ফোলেট (সম্পূর্ণ) ৫
ভিটামিন কে (মিলিগ্রাম) ৪
নিয়াসিন (মিলিগ্রাম) ০.১৬৬
রিবোফ্ল্যাভিন (মিলিগ্রাম) ০.০৪৭
থিয়ামিন (মিলিগ্রাম) ০.০৩১
বিটা ক্যারোটিন& ৪৯
ক্রিপ্টো জ্যানথিন& ২০
লিউটিন +জানথিন& ৫৩
আপেলকে বেশিদিন ধরে সুরক্ষিত রাখার উপায়
আপেল খুব শক্ত পোক্ত ও তাজা একটি ফল যা বেশ দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অনায়াসে টাটকা অবস্থায় রাখা যায়। তবে কিছু কিছু ছোট নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন। বাড়িতে আপেল নিয়ে আসলে ফ্রিজের একটি শুকনো ও ঠাণ্ডা বাক্সে আপেল রাখুন। এভাবে প্রায় এক মাস আপেল টাটকা থাকে। আপেল থেকে এথিলিন নামক একটি বায়ু নির্গত হয় যা আপেলকে দিনে দিনে পাকতে সাহায্য করে। ফ্রিজে রাখার ফলে এই এথিলিন ধীরে ধীরে নির্গত হয় ও আপেল দেরীতে পাকে। ফলে অনেকদিন পর্যন্ত আপনি তা সুরক্ষিত রাখতে পারেন। তবে একসাথে সব আপেল এক জায়গায় রাখবেন না, এতে সব কটি আপেল একসাথে পেকে যায়। এক একটি আলাদা আলাদা জায়গায় রাখবেন।
আপেলের ব্যবহার – How to Use Apple in Bengali
আপেল কতখানি উপকারী তা হয়তো আপনি ভালো করেই বুঝে গেছেন। এবারে দেখে নিন আপেলের ব্যবহার অর্থাৎ আপেল কিভাবে খাবেন বা কোন কোন সময় আপেল খেলে আপনি তার সর্বাধিক উপকারিতা পাবেন, ইত্যাদি।
দিনে ঠিক কটি আপেল খাওয়া উচিত?
বয়স অনুযায়ী আপেল খাওয়ার পরিমাণও বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম ভাবে নির্ভর করে। একটি শিশুর বয়স যদি ৪ বছরের নিচে হয়, তাহলে ১.৫ থেকে ২ বাটি আপেল খাওয়া যথেষ্ট। প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে দিনে প্রায় ২৫-৩০ গ্রাম ফাইবার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে অন্যান্য শাক সবজি ও ফলের সাথে ২-৩ টি ছোট আপেল অনায়াসেই খাওয়া যায়। আপেল যদি আকারে বড় হয় তবে ১ টি খাওয়া যথেষ্ট।
আপেল খাওয়ার সুরক্ষিত উপায়:
- বৈজ্ঞানিকভাবে বলা হয় যে খোসা সমেত আপেল খাওয়া সব থেকে উপকারী। কিন্তু বর্তমানে নানারকমের কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে তা বেশ ক্ষতিকারক হয়ে উঠেছে। তাহলে কি আপেলের খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া উচিত? আসলে না।
- দেখে নিন কিভাবে এই ক্ষতিকারক কীটনাশকের হাত থেকে আপনি আপেলকে টাটকা বানিয়ে তুলতে পারেন?
- বাজার থেকে টাটকা দেখে আপেল কিনে ভালো করে একটি ব্রাশ দিয়ে তার গায়ের ওপর জলের সাহায্যে ঘষুন।
- কোনোরকম সাবান ব্যবহার করবেন না। আপেল পরিষ্কার করার জন্যে জল যথেষ্ট। তবে উষ্ণ গরম জল হলে তা আরো ভালো।
- আপনি চাইলে এক পাত্র জলে এক চামচ বেকিং সোডা ফেলে আপেলগুলিকে ১০ থেকে ১৫মিনিট ভিজিয়ে রাখতে পারেন।
- বাজারে আপনি প্রায় হাজার রকমের আপেল কিনতে পাবেন যার ৫০%-ই হল রাসায়নিক সুগন্ধি ও রঙে ভরানো। তাই ভালো দেখে আপেল কিনতে হলে নিখুঁত ভাবে বাছাই করে দেখে নিন। এই আপেল আপনি গোটা খেতে পারেন বা জ্যুস অথবা সস অথবা কাস্টার্ড, ইত্যাদি হিসেবে খেতে পারেন। তবে সর্বাধিক উপকারিতা পাওয়ার জন্যে এটি গোটা অবস্থায় খাওয়ার অভ্যেস করুন (২৮)।
আপেলের ক্ষতিকর দিক – Side Effects of Apple in Bengali
সাধারণত আপেল এমন একটি ফল যার সেভাবে কোনো ক্ষতিকারক দিক থাকেনা। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ কয়েকটি জিনিস মনে রাখা খুব প্রয়োজন। আসুন দেখে নেওয়া যাক:
আপনার যদি ফ্রুক্টজের প্রতি এলার্জি থাকে তাহলে আপেল খেলে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর ফলে ডায়রিয়া, বমিভাব বা অস্বস্তি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।
আপনার যদি এমন কিছু ফল যেমন প্লাম, পিয়ার, এপ্রিকট ইত্যাদি ফলের প্রতি এলার্জি থাকে, তাহলে আপনার আপেলও এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ বৈজ্ঞানিকভাবে এই সব কটি ফল একই গোষ্ঠীর অন্তর্গত।
সাধারণত গর্ভবতী ও স্তন্যপান করানো মহিলাদের ক্ষেত্রে আপেল খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের থেকে পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
আপেলের বীজ থেকে খুব সাবধানে থাকবেন কারণ এটি ড্রাগ অর্থাৎ সাইনাইডের ভূমিকা নিতে পারে। আপেলের বীজ থেকে নানারকমের ড্রাগ তৈরী করা হয়।
তবে যাই হোক না কেন, একথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে আপেলের গুণ প্রমাণিত এবং বর্তমান পৃথিবীতে আপেল হল সর্বাধিক বিক্রি হওয়া একটি ফল। এর মধ্যে রয়েছে পুষ্টির ভাণ্ডার যা আপনার রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থেকে শুরু করে, দৃষ্টি শক্তি, শারীরিক শক্তি ও মস্তিষ্কের বিকাশ সব কিছুর ক্ষেত্রেই দারুণ কার্যকরী। তাহলে, আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই একটি করে আপেল যোগ করুন আজ থেকেই।
আমাদের এই পোস্ট কেমন লাগলো আপনাদের সেটি অবশ্যই আমাদের জানান কমেন্টের মাধ্যমে। এছাড়া এ বিষয়ে যদি আরো কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকে, সেটিও জানান আমাদের।
সুস্থ ও সুরক্ষিত থাকুন।
পোস্ট টি পড়ার জন্য আপনাকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ
আমাদের পোস্ট টি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে অথবা এই পোস্ট থেকে আপনি যদি উপকৃত হন, তাহলে আপনার একটি মূল্যবান কমেন্ট করেদিন,
এতে আমরা আরো অনুপ্রাণিত হতে পারি।
আপনার একটি কমেন্ট আমাদের আরো বেশি উৎসাহিত করে
Thank You
No comments:
Post a Comment