আনারসের উপকারিতা, ব্যবহার এবং ক্ষতিকারক দিক (Pineapple Benefits, Uses and Side Effects in Bengali)
আসুন জেনে নেই আনারসের পুষ্টিগুন ও উপকারীতাঃ
আনারস পুষ্টির বেশ বড় একটি উৎস। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং আরও অনেক পুষ্টি উপাদান।
2
এতে থাকা প্রচুর ভিটামিন সি ভাইরাসজনিত ঠাণ্ডা ও কাশি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া জ্বর ও জন্ডিসের প্রকোপ কমাতে আনারস বেশ উপকারী। নাক দিয়ে পানি পড়া, গলাব্যথা এবং ব্রংঙ্কাইটিসের বিকল্প ওষুধ হিসেবে আনারসের রস কাজ করে। তাই এ গরমে নিয়মিত আনারস খেয়েই দূর করা যাবে গরম- ঠাণ্ডার জ্বর, জ্বর-জ্বর ভাবসহ নানা সমস্যা।
3
এছাড়াও ওজন কমাতে, রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে, হাঁড় ও দাঁতের গঠনে, ক্যানসারপ্রতিরোধে, ত্বকের যত্নে রয়েছে এর দারুণ কার্যকারিতা।
4
আনারসে থাকা বিটা ক্যারোটিন চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করতে সাহায্য করে।
5
কৃমিনাশক হিসেবে আনারসের জুস ভালো কাজ করে। নিয়মিত আনারসের জুস খেলে কৃমির সমস্যা দূর করা সম্ভব।
আনারসে থাকে ব্রোমেলিন নামক এসিড যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে কিন্তু এটি অধিক পরিমাণে গ্রহণ না করে পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করলে এর সুফল পাওয়া যাবে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া। প্রেগন্যান্ট এবং আলসার রোগীদের না খাওয়াই ভালো। যাদের আনারসে এলার্জি হয় তারা লবন দিয়ে ধুয়ে খেলে উপকৃত হতে পারেন।
আনারসের উপকারিতা, ব্যবহার
আনারস হল একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল যা গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম বা উৎসেচক এবং পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। এটি খেতেও যেমন সুস্বাদু এর খাদ্য গুণও অনেক। এটি সম্ভাব্য ওজন হ্রাস, ভাল হজমশক্তি গড়ে তুলতে এবং প্রদাহের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাচ্চাদের শরীরে পুষ্টির পরিমান বাড়াতে পারে এই আনারস । আমাদের এই প্রতিবেদনে আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে নানা তথ্য থাকবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
আনারসে ব্রোমেলাইন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে এবং ক্ষত নিরাময়ের সম্ভাব্যতা বাড়িয়ে তোলে । আনারসের রস যেসব শিশুদেরও নিয়মিত খাওয়ানো হয় তাদের মাইক্রোবিয়াল সংক্রমণের ঝুঁকি কম হয় । এই ফলটি রোগ প্রতিরোধকারী শ্বেত রক্ত কণিকার (WBC) ঘনত্বকে চারগুণ বাড়িয়ে তোলে । অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে হাঁপানির লক্ষণগুলি কমানোর পিছনে জন্য ব্রোমেলাইন সম্ভাবনা থাকতে পারে ।
হজমের সমস্যাকে দূর করতে
আনারসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল ব্রোমেলাইন। একটি শক্তিশালী এনজাইম যা হজম ক্ষমতাকে উন্নত করে । গবেষণায় দেখা যায় ব্রোমেলাইন (ডাইজেস্টিভ এনজাইম) শরীরের
প্রোটিনগুলি ভাঙতে সাহায্য করে । গবেষণায় জানা যায়, ডায়রিয়ার সমস্যার থেকেও নাকি এই অনাররস মুক্তি দিতে পারে।
ব্লাড প্রেসার ঠিক রাখতে
আনারসে উপস্থিত ব্রোমেলাইন রক্তের প্লেটলেটগুলিকে জামাট বাঁধতে দেয় না। তাই থ্রোম্বোফ্লেবিটিস (রক্তের জমে যাওয়া) এর চিকিৎসায় সহায়তা করতে পারে। ফলে ব্লাড প্রেসারের মাত্রাও ঠিক থাকে । তবে কার্ডিওভাসকুলার রোগে ব্রোমেলিনের উপকারীতার কথা জানতে এ সম্পর্কে আরও গবেষণার প্রয়োজন ।
ডায়াবেটিস কমাতে
জানা যায়, রক্তের শর্করার পরিমান কমিয়ে আনতে পারে এই ফল। তবে এ সম্পর্কিত কোনো প্রমাণিত তথ্য নেই।
হাড়কে মজবুত করে
আনারসে ম্যাঙ্গানিজ থাকে যা হাড় গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এগুলিতে ভিটামিন সি রয়েছে যা হাড়ের কোলাজেন গঠনে সহায়তা করে। আনারস কম বয়সীদের ক্ষেত্রে হাড়ের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের হাড়কে শক্তিশালী করতে পারে (2)।
দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
ভিটামিন সি উপস্থিত থাকে বলে আনারস দাঁতের স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে পারে।
ওজন কমাতে
গবেষণায় দেখা গেছে , আনারসেঅ্যান্টি ওবিসিটির প্রভাবগুলি বর্তমান। এটি খেলে দেহে ফ্যাট কম জমে এবং লিভারের ফ্যাট জমতে দেয় না (3)।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে
ব্রোমেলাইন কোলন ক্যান্সার কোষগুলিতে ক্যান্সার বিরোধী প্রভাবগুলি প্রদর্শন করে। ব্রোমেলিনযুক্ত খাবারগুলি কলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে উপযোগী (4)।
ত্বকের জন্য আনারসের উপকারিতা
এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে সীমিত গবেষণা করা হয়েছে। আনারসে থাকা ভিটামিন সি ত্বকে তার উপকারিতার প্রভাব দেখায়। ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে করতে সাহায্য করে এবং ত্বক নানা ধরণের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে । এছাড়া যেসব উপকারিতা আছে তা নিচে উল্লেখ করা হল।
অ্যাকনে দূর করতে সাহায্য করে
ত্বককে সজীব করে তোলে
নখকে মজবুত করে তোলে
ঠোঁট বা পা ফেটে গেলে তা সারাতে।
এক্ষত্রে আনারস মিক্সার গ্রাইন্ডারে পেস্ট করে তা দিয়ে ফেস প্যাক বানিয়ে লাগাতে হবে।
চুলের জন্য আনারসের উপকারিতা
আনারসে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি পাওয়া যায় যা আমাদের চুলের সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য খুবই প্রয়োনজনীয়। এছাড়া ভিটামিন সি আমাদের চুল পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচায়। আনারসে উপস্থিত আ্যন্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরী। স্বাস্থ্যকর করে তোলে ও খুশকির থেকে বাঁচায়।
চুলকে পুষ্টি সমৃদ্ধ করে তুলে চুলে ঘন ও মজবুত বানায়।
চুলকে উজ্জ্বল করে তোলে।
এক্ষত্রে আনারস মিক্সার গ্রাইন্ডারে পেস্ট করে তা দিয়ে হেয়ার প্যাক বানিয়ে লাগাতে হবে।
আনারসের পুষ্টিগত মান
প্রতি এক কাপ (১৬৫ গ্রাম) আনারসের পুস্তুগুণ নিচে উল্লেখ করা হল।
৭৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি
৯৫ IU ভিটামিন এ
২১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
১৯ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম
১২ মিলিগ্রামফসফরাস
১৮০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম
২৯ মাইক্রো গ্রাম ফোলেট।
আনারসের ব্যবহার
আনারস কেটে ওপরে একটু বিট নুন ছড়িয়ে খেতে পারেন বা শুধুও খেতে পারেন। এছাড়া এর চাটনি বানিয়েও খেতে পারেন, অনেকেরই খুব পছন্দের আনারসের চাটনি।
আনারসের ক্ষতিকারক দিক
অ্যালাৰ্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে গর্ভাবস্থায় গর্ভপাতের কারণ হতে পারে এবং গর্ভাবস্থায় বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় আনারস খাওয়া এড়ানো উচিত।
তবে এটি খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
আনারস আপনার শরীরকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে। আপনি এটিকে আপনার ডায়েটে যোগ করতে পারেন । এর উচ্চ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে । যদিও অ্যালার্জির থেকে সাবধান থাকুন। আপনি যদি কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনুভব করেন, তাহলে এটি ব্যবহার বন্ধ করুন এবং আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
No comments:
Post a Comment